2.5.4 নেটওয়ার্ক ডিভাইস (Network Devices)

কম্পিউটার নেটওয়ার্ক তৈরির জন্য কম্পিউটারগুলো যুক্ত করতে যেসব যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা হয় সেগুলোকে নেটওয়ার্ক ডিভাইস বলা হয়। এসব যন্ত্রপাতি মূলত নেটওয়ার্কে ডেটার প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করে এবং সংকেত ও ডেটাকে তার সঠিক গন্তব্যে পৌঁছাতে সাহায্য করে।
এসব যন্ত্রপাতির মধ্যে রয়েছে:

  • মডেম
  • হাব
  • রাউটার
  • গেটওয়ে
  • সুইচ
  • নেটওয়ার্ক ইন্টারফেস কার্ড

মডেম (Modem): নেটওয়ার্ক প্রযুক্তি গড়ে ওঠার আগে টেলিফোন লাইন (এবং কখনো কখনো টেলিভিশনের ক্যাবল লাইন) ব্যবহার করে নেটওয়ার্কিং করার জন্য মডেম উদ্ভাবিত হয়েছিল। মডেম (Modem) শব্দটি Modulator ও Demodulator শব্দটির সমন্বয়ে গঠিত এবং এর নাম দেখেই অনুমান করা যায় এটি অ্যানালগ সিগন্যাল ব্যবহার করে ডিজিটাল সিগন্যাল পাঠানোর একটি প্রক্রিয়া। বর্তমানে ফাইবার এবং ওয়ারলেস নেটওয়ার্ক গড়ে ওঠার কারণে মডেমের ব্যবহার বিলুপ্তির দিকে।

হাব (Hub): একটি কম্পিউটারের সাথে অন্য কম্পিউটার বা ডিভাইসের নেটওয়ার্কিং করার জন্য হাব ব্যবহৃত হতো। হাবের পোর্টগুলোতে কম্পিউটারের নেটওয়ার্কিং পোর্টগুলো সংযুক্ত করা হলে একটি LAN তৈরি হয়ে যায়। হাবের ভেতরে কোনো বুদ্ধিমত্তা নেই, এটি বিভিন্ন ডিভাইসের নেটওয়ার্কিং পোর্টগুলোর ভেতর এক ধরনের পরিবাহিক যোগাযোগ ছাড়া আর কিছুই নয়। এজন্য হাবে প্রেরিত যেকোনো সংকেত কোনোরূপ পরিবর্তন ছাড়াই সংযুক্ত প্রতিটি ডিভাইসে ব্রডকাস্ট করে, এক্ষেত্রে সংকেতটি যে ডিভাইসের জন্য পাঠানো হয়েছে সেই ডিভাইসটিই শুধু সংকেত গ্রহণ করে, বাকি ডিভাইসগুলো সংকেত গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকে। সে কারণে হাবে ডেটা কলিশন বা সংঘর্ষের আশঙ্কা থাকে এবং নেটওয়ার্কে ট্রাফিক জ্যাম বেড়ে যায়। বর্তমানে হাবের ব্যবহার বিলুপ্তির পথে।

সুইচ (Switch): নেটওয়ার্কিং করার জন্য বর্তমানে হাবের পরিবর্তে ব্যাপকভাবে সুইচ ব্যবহৃত হয়। কার্যক্রমের দিক থেকে হাব এর সাথে সুইচের তেমন কোনো পার্থক্য নেই তবে সুইচের বুদ্ধিমত্তা রয়েছে। সুইচ কোনো সংকেতকে ব্রডকাস্ট করে না, সংঘর্ষ এড়ানোর জন্য প্রতিটি কম্পিউটারের MAC (Media Access Control) অ্যাড্রেস ব্যবহার করে শুধু নির্দিষ্ট পোর্টে সিগন্যালটি পাঠায়। শুধু তাই নয় দুর্বল হয়ে পড়া সংকেতটিকে অ্যামপ্লিফাই (বর্ধিত) করে গন্তব্য কম্পিউটারের পোর্টে প্রেরণ করে।

সুইচে পোর্টের সংখ্যা 8, 16, 24 থেকে 48 পর্যন্ত হয়ে থাকে। এতে ডেটা ফিল্টারিং করা সম্ভব তবে ব্যবহারের দিক থেকে একটু জটিল। একটি সুইচ দিয়ে একটি LAN তৈরি করা যায়, একাধিক LAN তৈরি সম্ভব নয়।

রাউটার (Router): রাউটার এমন একটি কানেকটিং ডিভাইস যা একই প্রটোকল ভুক্ত দুই বা ততোধিক স্বতন্ত্র নেটওয়ার্কের সংযোগ করে নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ করতে পারে। এর মাধ্যমে একই ধরনের ছোট আকারের ভিন্ন ভিন্ন গঠনের একাধিক LAN সংযুক্ত করে বড় ধরনের নেটওয়ার্ক গড়ে তোলা যায়। WAN এর সাথে একটি LAN যুক্ত করতে রাউটার ব্যবহৃত হয়। রাউটার NAT (Network Address Translation) ব্যবহার করে নেটওয়ার্ক চিহ্নিত করে থাকে। একটি নেটওয়ার্ক থেকে পাওয়া ডেটা সংকেত রাউটার সবচেয়ে কম দূরত্বের পথ ব্যবহার করে অন্য নেটওয়ার্কের নির্দিষ্ট ডিভাইসে পাঠাতে পারে। কোনো একটি ডেটা প্যাকেটকে কোন পথ দিয়ে পাঠানো সবচেয়ে সুবিধাজনক রাউটার সে সিদ্ধান্ত নিতে পারে। রাউটার ডেটা ফিল্টারিং করতে পারে। নেটওয়ার্কে ডেটার আধিক্য এবং ব্যস্ততা দেখতে পেলে রাউটার সেই রুট (পথ) পরিহার করে অন্য রুট (পথ) দিয়ে ডেটা পাঠাতে সক্ষম হয়। তবে এর কনফিগারেশন অপেক্ষাকৃত ভাবে একটু জটিল। একই প্রটোকল বিশিষ্ট নেটওয়ার্কের মাঝে সংযোগ স্থাপন করলেও রাউটার ভিন্ন প্রটোকল বিশিষ্ট একাধিক নেটওয়ার্কের মাঝে সংযোগ স্থাপন করতে পারে না।

গেটওয়ে (Gateway): ভিন্নধর্মী প্রটোকলবিশিষ্ট নেটওয়ার্কের মধ্যে সংযোগ স্থাপনের জন্য গেটওয়ে ব্যবহৃত হয়। এটি একই ধরনের বা ভিন্ন ভিন্ন প্রটোকলবিশিষ্ট একাধিক নেটওয়ার্কের মধ্যে ডেটা আদান প্রদানের সুযোগ করে দেয় অর্থাৎ এটি মূলত একটি নেটওয়ার্ক কানেক্টিভিটি ডিভাইস। অপেক্ষাকৃত দামি এবং কনফিগারেশন জটিল প্রকৃতির হলেও গেটওয়ে ও রাউটার ব্যবহার করে ছোট ছোট নেটওয়ার্ককে যুক্ত করে বড় ধরনের নেটওয়ার্ক গড়ে তোলা যায়। গেটওয়ে PAT (Protocol Address Translation) ব্যবহার করে নেটওয়ার্ক চিহ্নিত করে থাকে বলে একে প্রটোকল কনভার্টার বলে। এটি ডেটা ফিল্টারিং করতে পারে এবং শুধু টার্গেট আই.পি অ্যাড্রেসে সংকেত পাঠায়। এটি রাউটারের চেয়ে দ্রুতগতি সম্পন্ন এবং ডেটার সংঘর্ষ বা কলিশন আশঙ্কা কম।

নেটওয়ার্ক ইন্টারফেস কার্ড (NIC): একসময় কম্পিউটার বা অন্য কোনো ডিভাইসকে নেটওয়ার্কে যুক্ত করার জন্য আলাদা করে নেটওয়ার্ক ইন্টারফেস কার্ড (NIC: Network Interface Card) ব্যবহৃত হতো। বর্তমানে কম্পিউটরগুলোতে এই কার্ড বিল্ট-ইন অবস্থায় থাকে বলে আলাদাভাবে এর ব্যবহার বিলুপ্তির পথে।